জামানের মতো সুখী পরিবার থাকার পরেও যাদের মনে অসুখ, জুনায়েদের মতো পাখিদের যদি খোলা আকাশে ডানা মেলার স্বপ্ন থাকে তবে অসুস্থ সুমনকে সঙ্গী করতে না পারলেও নাজমের মতো দুষ্টু, শিমুলের মতো ঝানু আর মাসুমের মতো সরল বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারি স্তব্ধপ্রায় নদী ছুঁয়ে যাওয়া সবুজ কোন গাঁয়।
যেখানে ‘সোনার তরী’র মত খেত, চাষি ও পাকা ধান বোঝাই খেয়া আর গন্তব্যে ফেরার জন্য মাঝি ভাইয়ের বড্ড তাড়া। খোলা চুলে মায়ামাখা হাসির পরেও পল্লি বালাদের লাজুক কন্ঠে- আমবাগানে ঢিল ছুড়তে বারণ!
খানিক বাদেই দুষ্ট ছেলেদের ভ্রান্ত চাহুনিতে মুসকি হাসির মিষ্টি কথায় কাপা কাপা স্বরে দাদুকে সাদা বক দেখিয়ে দেওয়ার মতো কম বয়সী মেয়েটির জবাব- ‘উনারা শহরের মানুষ, তাই দুটো আম দিয়েছি’। বিনে পয়সায় দুই হালি প্রায় আম পাওয়াতে লাল ওড়না জড়ানো চঞ্চল কিশোরীটি একটু বেশি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।
সংসারপ্রেমী কৃষাণবধূর দুধের গাইটি চৈত্রের রোদ থেকে গাছের ছায়ায় বাঁধা, ছাগল ছানা দুটিকে অক্লান্ত তাড়া করা, হাসগুলোকে ধানখেত থেকে চুপি চুপি নিয়ে আসা আর গৃহবধূর লাজুক আঁচলের রূপ যেন আপনের মতো। কৃষকের খেত ছোঁয়া ভালোবাসা ফের ক্লান্তিতে বিশ্রাম- চেনা চেনা মনে হয়। আর পল্লির বুকে খেয়া পারাপার ও নৌকোচরে গন্তব্যে পাড়ি দেওয়া সত্যিই ছবির মতো।
নদীর কোলে ঝুঁকে থাকা গাছে চড়ে বালকদের দোল খাওয়া, দামাল ছেলেদের এক সাথে পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া আর সারা গাঁয়ে ছুটে বেড়ানোর ছবি সেই শৈশবকে কাছে পাবার মতো।
মুক্ত পাখির ডানার মতো শেষ বসন্ত ছোঁয়া সবুজ গাঁয়ে ধান-শালিকের মেলা বকের সারি আর ঝোঁপের মধ্যে একটি ডাহুকের দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় আপন নীরের কথা, যা এখন অতীত!
তবে ডোবা থেকে আসা পচান পাতার ঘ্রাণ, হিজল বনে অচেনা বুনো ফুল আর দখিনা সমিরণে- খোলা গাঁয়ে জুনার ‘বান্ধবী’ বন্ধীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে- উল্লাসে আত্মহারা!